Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সম্ভাবনাময় ভোজ্যতেল ফসল পেরিলা

সম্ভাবনাময় ভোজ্যতেল ফসল পেরিলা
মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ূম মজুমদার

পেরিলা বাংলাদেশে অভিযোজিত একটি নতুন ভোজ্যতেল ফসল। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অনুকূলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) নামে বাংলাদেশে প্রথম পেরিলার একটি জাত নিবন্ধিত হয়।
পেরিলা মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার জাত যা কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Perilla frutescens (L.) Britton এবং এটি Lamiaceae (Mint) পরিবারভুক্ত। পেরিলা তেল দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে ব্যবহার করা হয়। পেরিলা তেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি উচ্চ মাত্রার ৫০-৬০% ওমেগা-৩ এবং ফ্যাটি এসিড বা α-লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ ও ২২-২৩% ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড বা লিনোলিক এসিড এবং ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড মুক্ত। এই তেলের ৯২% ই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ হওয়ায় পেরিলা তেল মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি কমানোতে এই তেলের অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশে বার্ষিক ভোজ্যতেলের গড় চাহিদা প্রায় ২.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২.০-২.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন তৈল এবং পাম ওয়েল আমদানি করা হয়। এছাড়া সরিষা, সূর্যমুখী, রাইচ বার্ন ওয়েলসহ অন্যান্য ভোজ্যতেল আমদানি করা হয় (সূত্র : দি ফাইন্যাসিয়াল এক্সপ্রেস, ৬ জানুয়ারি ২০২১)। বাংলাদেশে প্রচলিত যে সকল তেল ফসল রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সরিষা, তিল, তিসি, বাদাম ইত্যাদি। এই সকল তেল ফসল হতে নিজস্ব চাহিদার মাত্র ১০% পূরণ করে থাকে। বাংলাদেশে তেল ফসলের মধ্যে তিল ছাড়া অন্যান্য ফসল রবি মৌসুম বা শীতকালে হয়ে থাকে। রবি মৌসুমে আন্তঃফসলের প্রতিযোগিতার জন্য চাইলেও তেল ফসলের জমি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
পেরিলার জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন (বীজতলা ২৫-৩০ দিন এবং মূল জমি ৭০-৭৫ দিন)। পেরিলা বীজে তেলের পরিমাণ প্রায় ৪০%। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়। আউশ ধান কর্তন করার পর এর বেশির ভাগ জমি প্রায় আড়াই মাস পতিত থাকে। এরপর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সরিষা বপন করা শুরু হয়। মূল জমিতে পেরিলার জীবনকাল মাত্র     ৭০-৭৫ দিন হওয়ায় সহজেই এর বেশির ভাগ জমিতে সরিষা লাগানোর পূর্বে পেরিলা রোপণ করে কর্তন করা যায়। লবণ সহনশীল হওয়ায় উপকূলীয় বন্যামুক্ত পতিত জমি সহজেই পেরিলার আওতায় আনা সম্ভব। এ ছাড়া আমন ধান হয় এমন উঁচু জমি যেখানে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয় এবং খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি সে সকল জমি পেরিলার আওতায় নিয়ে আসলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমন ধান রোপণ করার পর পতিত বীজতলাসমূহ পেরিলা চাষের আওতায় আনলে দেশে তেল ফসলের ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে একটি সামর্থ্যবান বড় ভোক্তা শ্রেণী রয়েছেন যারা দেশের বাইরে থেকে আগত অলিভ তেল, ক্যানোলা তেল, সূর্যমুখি তেল খেয়ে থাকেন। এগুলোর বাজারমূল্যও অনেক বেশি। পেরিলা তেলের আবাদ যদি বাংলাদেশে বাড়ানো যায় তাহলে সামর্থ্যবান ভোক্তা শ্রেণীর মধ্যে এই উচ্চ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ পেরিলা তেলে আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে দেশের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি কৃষকও তার ফসল অধিক লাভে বিক্রি করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে শিক্ষিত বেকার যুবক শ্রেণী যারা রয়েছেন তাদের পেরিলা ফসলের চাষ এবং তেলের ব্যবসায় স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া পেরিলার বাজারমূল্য অনেক বেশি হওয়ায় দেশে এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের বাজারজাতকরণে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সন্তোষজনক মুনাফা লাভের সুযোগ রয়েছে। পেরিলা তেল ক্রুড বা রিফাইন ছাড়া খাওয়া যায়। ফলে কৃষক বা গ্রামের জনগণ দেশে প্রচলিত যন্ত্র থেকে সহজেই পেরিলা বীজ হতে তেল আরোহণ করে খেতে পারবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে পেরিলা চাষের সম্প্রসারণের উদ্যেগ নিশ্চিত করা গেলে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে উচ্চ গুণাগুণ সমৃদ্ধ পেরিলা তেল সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।   
সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) এর উৎপাদন প্রযুক্তি
পানি জমে থাকে না এমন প্রায় সব ধরনের মাটি এ ফসল চাষের উপযোগী। তবে বেলে দোঁ-আশ বা দোঁআশ  মাটি পেরিলা চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
বীজতলা তৈরি, বীজ বপন ও জমি তৈরি :  খরিপ-২ মৌসুম, বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১০ জুলাই-২৫ জুলাই। পেরিলা অত্যন্ত ফটোসেনসেটিভ ফসল। সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে পেরিলা গাছে ফুল আসা শুরু হয়। কাজেই গাছের পর্যাপ্ত অংগজ বৃদ্ধি এবং কাক্সিক্ষত মাত্রার ফলন পেতে হলে  নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই বীজ বপন করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১-১.৫  কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজতলার প্রস্থ ১-১.৫ মিটার এবং দৈর্ঘ্য জমির আকার অনুযায়ী যে কোন পরিমাণ নেয়া যাবে। বীজতলায় জৈবসারের ব্যবস্থা করলে স্বাস্থ্যবান চারা পাওয়া যাবে। বীজতলায় দুই বেডের মাঝে নালার ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন বৃষ্টি হওয়ার পর অতিরিক্ত পানি বীজতলায় জমে না থাকতে পারে। বীজের আকার ছোট হওয়ায় মাটি যথাসম্ভব ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। পিঁপড়ার আক্রমণ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খরিপ-২ মৌসুমে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় বীজ বপনের পর প্রথম ১৫ দিন পর্যন্ত বীজতলার চার পাশে খুঁটি দিয়ে উঁচু করে পলিথিন দেয়া যেতে পারে। ১/৪ ইঞ্চি গভীর লাইন করে বীজ বপন করলে বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে। অথবা বীজ ছিটিয়ে দিয়ে ঝুরঝুরে মাটি উপর দিয়ে দিতে হবে। বীজবপনের পর বীজতলায় হালকা করে পানি দিতে হবে। বীজ তলা যেন একেবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল করতে হবে।
৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হবে। জমির চার পাশে নালার ব্যবস্থা করলে পানি নিষ্কাশনের জন্য সুবিধা হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০-৪০ সেমি. এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০-৪০ সেমি. বজায় রেখে চারা রোপণ করতে হয়।    
চারা রোপণ
বীজ বপণের ২৫-৩০ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী হয়। এই সময় প্রতিটি চারায় ৫-৬টি পাতা হয়। চারা উত্তোলনের সাথে সাথেই রোপণ করতে হবে। চারা উত্তোলনের পর চারার আটি বাধার সময় শিকড়ে মাটি রেখে দিলে রোপণের পর গাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে উপকার হয়। মূল জমিতে সাধারণত ২ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করে চারা রোপণ করলে পানি নিষ্কাশনের জন্য ভালো হয়। দুই বেডের মাঝে ২০-৩০ সেমি. প্রশস্তনালা রাখতে হবে। সাধারণত বেড তৈরি ছাড়াও চারা রোপণ করা যায় তবে সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চারা রোপণের পর পরই হালকা সেচ দিতে হবে।
সেচ ও নিষ্কাশন
বর্ষাকাল বা খরিপ-২ মৌসুমে পেরিলার চাষ হওয়ায় সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে ফুল আসার সময় একটানা    ১৫-২০ দিন বৃষ্টি না হলে ফুল আসার সময় হালকা সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হতে পারে। জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা
চারা রোপণের ১০-১৫- দিন পর একবার এবং ২৫-৩০ দিন পর দ্বিতীয় বার নিড়ানি দিতে হয়। এ ফসলে সাধারণত রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম হয়। তবে কাটুই পোকা, হক মথ, বিছা পোকা প্রভৃতি পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। ক্ষতির ধরন দেখে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।
বীজ বা ফসল পরিপক্বতার সময়
চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে পেরিলা ফসল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত বীজ পরিপক্বতার সময় গাছের  পাতা ঝরে  যায়। গাছের পাতা যদি কমপক্ষে ৮০% হলুদ হয় তখনই বীজ ধূসর রং ধারণ করে এবং বীজ সংগ্রহের উপযোগী হয়। বাহির দিক থেকে বীজ দেখা যায় বিধায় বীজের পরিপক্বতা সহজেই বুঝা যায়।
ফসল মাড়াই/সংগ্রহ পদ্ধতি
বীজের পরিপক্বতা আসার পর গাছের গোড়া কেটে দিতে হয় অথবা পুরো গাছ উপড়ে ফেলতে হয়। তারপর শক্ত চটের বস্তা অথবা শক্ত পলিথিন বা ত্রিপল বিছিয়ে গাছগুলো ধরে হালকাভাবে পিটিয়ে বীজ সহজেই সংগ্রহ করা যায়। হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফলন হয়ে থাকে।
বীজ সংরক্ষণ
বীজ ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। বীজের আর্দ্রতা ৭-৮% আসার পর বীজ টিন অথবা প্লাস্টিকের পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ সংরক্ষণের পাত্রে বাতাস যেন চলাচল না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সংরক্ষিত বীজ যথাসম্ভব আর্দ্র নয় এমন ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। সংরক্ষণের জন্য বীজ ভর্তি পাত্র মাটির সংস্পর্শে রাখা বাঞ্ছনীয়।

পিএইচডি ফেলো ইন পেরিলা অয়েল ক্রপ  (শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়) ও উপজেলা কৃষি অফিসার (এলআর), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মোবাইল : ০১৯১৫১৭৬৩২০, ই-মেইল : kaioumbaudae27@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon